সোনাদিয়া দ্বীপ ভ্রমন


দেশের পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার জেলাধীন একটি অত্যন্ত সুন্দর দ্বীপ, সোনাদিয়া। অায়তনে প্রায় ৯ বর্গ কিলোমিটার। এটি কক্সবাজার ঘেঁষে জেগে উঠা দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী-এর অন্তর্গত। কক্সবাজার শহর থেকে মহেশখালী প্রায় ১২ কিলোমিটার। আর মহেশখালী থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে সাগরের বুকে এর অবস্থান। মহেশখালীর দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের কুল ঘেঁষে অবস্থিত দ্বীপটি একটি খাল দিয়ে মহেশখালী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে।



কেন যাবেন সোনাদিয়া দ্বীপ?
===================
তিন দিকে সমুদ্র সৈকত, সৈকত জুড়ে বালিয়াড়ি, কেয়া-নিশিন্দার ঝোপ, প্যারাবন এবং বিচিত্র প্রজাতির জলাচর পাখি মিলে দ্বীপটিকে করেছে সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে। দ্বীপটি পাখিদের জন্য এক টুকরো ভূ-স্বর্গ। দ্বীপের পশ্চিম পাড়ায় বালুকাময় সমুদ্র সৈকতে ঝিনুক ও মুক্তা পাওয়া যায়। দ্বীপের বালিমাটিতে চাষ হয় সুমিস্ট তরমুজ।

মহেশখালী থেকে সোনাদিয়া দ্বীপ যাওয়ার পথের দৃশ্য অসম্ভব সুন্দর, যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা চিত্রকর্ম। খালের স্বচ্ছ ও টলটলে পানিতে মনে হয় কাঁচের ওপর দিয়ে চলেছে নৌকা। সমুদ্র থেকে সৃষ্টি হয়ে একটি খাল ভিতরের দিকে গিয়ে কয়েকটি শাখা প্রশাখায় ছড়িয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তার দু-পাশে কেওড়া, হারগোজা, উড়িঘাস এবং কালো ও সাদা বাইন বৃক্ষের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন সবুজ বন।






ছোট এ দ্বীপটি দু’টি পাড়ায় বিভক্ত- পূর্ব ও পশ্চিম। পশ্চিম দিকের শেষ প্রান্ত বেশ খোলামেলা। এখানে জনবসতি নেই বললেই চলে। সবুজ ঘাসের কার্পেটে মোড়ানো খোলামাঠ, নির্জনতা ও টানা বয়ে চলা মৃদুমন্দ বাতাস মিলিয়ে মন প্রশান্তিতে ভরে যায়। অাছে লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি। এখানকার সূর্যাস্ত এক কথায় অসাধারণ। সন্ধ্যায় সাদা পালক দুলিয়ে সারি সারি বকের উড়ে যাওয়ার দৃশ্য অার অস্তগামী সূযে্যর সাগরের বুকে তৈরি করা মোহনীয় পরিবেশ অাপনাকে বিমোহিত করবে। চঁাদনি রাতে সোনাদিয়ার সৈকতে রাত্রিযাপন হতে পারে আপনার জীবনের সেরা রাতের একটি।
বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে উঠা ছোট এবং জন বিরল এ দ্বীপটি ক্যাম্পিং-এর জন্য একটি অসাধারণ জায়গা। ভরা পূর্নিমায় বন্ধু বান্ধব সৈকতে কাটানো রাত অাপনাকে অসম্ভব সুন্দর এক অভিজ্ঞতা দিবে সন্দেহ নেই।



থাকা-খাওয়া
=========
এখানে পর্যটকদের থাকার জন্য আবাসিক ব্যবস্থা কিম্বা খাওয়ার জন্য হোটেল কোনটাই নেই । তবে স্থানীয় লোকজনকে টাকা দিয়ে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা যায়। তবে ক্যাম্প করে থাকাই উত্তম।

যাতায়াত ব্যবস্থা:
===========
সোনাদিয়া দ্বীপে যেতে হলে প্রথমে যেতে হবে কক্সবাজার।ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য এসি/নন-এসি বাস স্লীপার কোচ ছাড়াও রয়েছে বিমানের সুবিধা।
কক্সবাজার শহরের কস্তুরা ঘাট/ ৬নং ঘাট থেকে স্পিডবোট বা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে যেতে হবে মহেশখালী। স্পীডবোটে ১২/১৫ মিনিটে (ভাড়া ৭৫-১০০/-) অার ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ৪৫ মিনিটে (ভাড়া ৩০/-) মহেশখালী পেঁৗছানো যায়। বোট থেকে নেমে রিক্সা নিয়ে যেতে হবে গোরকঘাটা বাজার (ভাড়া ২০/)। সেখান থেকে যেতে হবে ২৪ কিলো দূরে অবস্থিত ঘটিভাঙা। যেতে পারেন সিএনজিতে করে ভাড়া পড়বে ১৫০-২০০/-। ঘটিভাঙ্গা থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় সোনাদিয়া চ্যানেল পার হলেই সোনাদিয়া।

ভাটার সময় খালে খুব বেশি পানি থাকে না। প্রতিদিন জোয়ারের সময় পশ্চিম সোনাদিয়া থেকে ঘটিভাঙা পর্যন্ত মাত্র একবার একটি ট্রলার ছেড়ে আসে। এই ট্রলারটিই কিছুক্ষণের মধ্যে যাত্রীদের তুলে নিয়ে আবার ফিরতি যাত্রা করে।

কক্সবাজার থেকেও সরাসরি স্পিডবোট/ ইঞ্জিনচালিত নৌকা রিজার্ভ করে সোনাদিয়া দ্বীপে যাওযার ব্যবস্থা রয়েছে। সেক্ষেত্রে ভাড়া একটি বেশি পড়বে। তবে ভ্রমনসঙ্গী বেশি হলে সরাসরি যাওয়াই উত্তম। এতে বারবার বাহন পরিবর্তনের ঝামেলা এড়ানো যাবে। স্পিডবোটে সোনাদিয়া গমন অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষদের ভ্রমন অানন্দকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিবে ।

টিপস্ এ্যন্ড ট্রিকস্
=============
 মহেশখালীতে রিক্সা/অটো/সিএনজি ভাড়া করার সময় ভাড়া এবং গন্তব্য দু’টি বিষয় সুস্পস্ট করুন। অন্যথায় ঝামেলায় পড়তে পারেন। মহেশখালীতে না গিয়ে থাকলে মহেশখালী হয়ে যাওয়াই ভালো। সেক্ষেত্রে মহেশখালীর সৌন্দয্য উপভোগের সুযোগ পাবেন।
 তবে মহেশখালীতে বেড়ানোর ইচ্ছে না থাকলে ৬ নং ঘাট থেকে সরাসরি চলে যান। সোনাদিয়া দ্বীপে অানন্দ অায়োজনে একটু বড় দল নিয়ে যাওয়া ভালো। এতে করে খরচ কম পড়বে এবং থাকা (ক্যাম্পিং) খাওয়ার ব্যবস্থা করা সহজ হবে।
 সোনাদিয়া দ্বীপের বিকেল এবং রাত অসাধারণ সুন্দর হয়ে থাকে। সুতরাং ভ্রমন পরিকল্পনায় অবশ্যই রাত রাখুন।
 এখানে তেমন কিছুই পাওয়া যায় না (বাজার নেই, কয়েকটি ছোট দোকান অাছে)। সুতরাং শুকনো খাবার এবং পানীয় জল সাথে নিয়ে যাওয়া ভালো।

বিঃদ্রঃ
=====
দ্বীপটিকে সরকার প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। সুতরাং ভ্রমন কালে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এমন কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে এবং নিজের দলের অন্যদের বিরত রাখুন।দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে অবদান রাখুন। অাপনার ভ্রমন উপভোগ্য এবং নিরাপদ হোক।

Comments

Popular posts from this blog

বান্দরবান ভ্রমন গাইড

সাগরকন্যা কুয়াকাটা ভ্রমন

সেন্টমার্টিন ভ্রমনের আদ্যপান্ত