কক্সবাজার ভ্রমন গাইড


কক্সবাজার বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকত। এর দৈর্ঘ্য ১২০ কিমি বলা হয়ে থাকে। এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহত্ পর্যটন কেন্দ্র।বিস্তীর্ণ বালুকাবেলা, মেঘ কালো ঝাউবনের সারি, দিগন্তজোড়া সবুজ পানি, বালুকাময় সৈকতে আছড়ে পড়া পাহাড়সম ঢেউ, সমুদে্রর পানিতে পর্যটকদের জলকেলি, সমুদে্রর মায়াবী গর্জন, পাহাড়ের পেছন থেকে জেগে উঠা সকালের প্রথম সূর্য্য, আর শেষ বিকেলের অস্তগামী সূর্যের মায়াবী রূপ এখানে পর্যটনদেরকে বিমোহিত করে রাখে।
অবস্থান
চট্টগ্রাম শহর থেকে ১৫২ কিমি দক্ষিণে অবস্থিত এই সমুদ্র সৈকতের দূরত্ব ঢাকা থেকে ৪১৪ কিমি। রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক এবং বিমানপথে কক্সবাজার যাওয়া। তবে ঢাকা থেকে ট্রেনে করে চট্রগ্রাম গিয়েও সেখান থেকে সহজেই কক্সবাজার যাওয়া যায়।
কোথায় যাবেন? কী কী দেখবেন?
কক্সবাজারে দেখার মত অনেকগুলো স্পট রয়েছে। পর্যন্ত তথ্যের অভাবে অনেকেই এসব স্থানের সৌন্দয্য উপভোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন। অাপনার কক্সবাজার ভ্রমনকে সহজতর এবং অধিকতর উপভোগ্য করে তোলার জন্য অামাদের এই অায়োজন।
কলাতলী, সুগন্ধ্যা ও লাবনী সৈকত
কলাতলী, সুগন্ধ্যা এবং লাবনী সৈকত পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ । সকাল অার দুপুরে এখানে সমুদে্র পানিতে গোসল করা, বীচ চেয়ারে বসে সমুদে্রর নীল ঢেউ অার সমুদে্রর গর্জন শোনা বেশ উপভোগ্য । ঘোড়ার গাড়িতে উঠার কারো শখ থাকলে সে শখ পূরণ করতে পারেন, পারেন বীচে চলাচল উপযোগী চার চাকার গাড়ী চালাতে। এছাড়াও ওয়াটার বাইক বা স্পীড বোটে করে ঘুরতে পারেন সমুদে্র বুকে, গাড়ীর চাকার টিউবে ভাড়া নিয়ে ভাসতে পারেন সমুদে্র। বীচ চেয়ারে বসে অস্তগামী সূর্য্য দেখা সারাদিনের অানন্দ অায়োজনে যোগ করবে ভিন্ন মাত্রা। কক্সবাজারের সন্ধ্যা কাটাতে পারেন বীচ চেয়ারে বসে সমুদে্র স্বাস্থ্যকর বাতাস উপভোগ করে, সাথে যোগ হতে পারে বার বি বিউ-এর অানন্দ। বিভিন্ন ধরনের সামুদি্রক মাছ ভাজা অনেকেই উপভোগ করেন।এ মাছের তালিকায়, রুপচঁাদা, ইলিশ, টেক চঁাদ, সুরমা, থেকে শুরু করে রয়েছে লবস্টার, কঁাকড়া অার অক্টোপাশও। মাছের দোকানগুলো বেশিরভাগই কলাতলী সীবীচে যাওয়ার রাস্তায়। একটু দামাদামি করেই মাছ খেতে হবে না হলে গুনতে হবে অতিরিক্ত অর্থ। রাতের কক্সবাজারে সময় কাটানোর অারেকটি ভালো উপায় হলো কেনাকাটা করা। যেতে পারেন ঝিনুক মার্কেট বা বার্মিজ মার্কেটে।
ঝিনুক মার্কেট/বার্মিজ মার্কেট
ঝিনুক মার্কেটের অবস্থান লাবণী পয়েন্টে। তবে কলাতলী সীবিচেও বেশ কিছু দোকানপাট রয়েছে যেখানে নানারকম জিনিসের পসরা সাজিয়েছে দোকানিরা পর্যটকদের জন্য অপেক্ষা করে। কলাতলী সৈকতে আছে বেশকিছু রেস্টুরেন্ট, যেখানে বসে এক মগ কফি পান করতে করতে মনোরম সূর্যাস্ত উপভোগ করতে পারেন । কেনাকাটার জন্য যেতে পারেন বার্মিজ মার্কেটেও। সেক্ষেত্রে যেতে হবে কক্সবাজার শহরে। শহরের টেকপাড়ায় অবস্থিত এ মার্কেটে মিয়ানমার থেকে অাসা পণ্য ছাড়াও রাখাইনদের তৈরি বিভিন্ন হস্তশিল্পের জন্য বিখ্যাত । রিক্সায় ও টমটমে করে চলে যেতে পারেন বার্মিজ মার্কেটে।
মেরিন ড্রাইভ
মেরিন ড্রাইভটি কক্সবাজারের কলাতলী থেকে শুধু হয়ে শেষ হয় টেকনাফে। মোট দীর্ঘ ৮০ কি.মি.। এটিকে ধরা হয় পৃথিবীর দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ হিসেবে।একপাশে পাহাড় অার অন্যপাশে সমুদ্র। পথের বামে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা সবুজ ঘেরা পাহাড় আর ডানদিকে সমুদ্রের নীল জলরাশি থেকে ধেয়ে আসা অনবরত ঢেউয়ের খেলা। শেষ বিকেলের মিষ্টি রোদে খোলা জীপে দাড়িয়ে দেখা এ দৃশ্য অাপনার মন ভরিয়ে দিবে। মনের অজান্তেই গেয়ে উঠবেন... এই পথ যদি না শেষ হয়... বা অাবার অাসিব ফিরে...। মেরিন ড্রাইভের রাস্তা পুরোটা ঘুরে আসতে সময় লাগবে ৪/৫ ঘণ্টা। গাড়ি ঠিক করার সময় পুরো রাস্তা ঘুরতে চান সেটা ড্রাইভারকে জানিয়ে রাখবেন। নাহলে ইনানি কিংবা আশেপাশের কিছু অংশ ঘুরিয়েই তারা আপনাকে ফিরিয়ে আনবে। সিজনের উপর নির্ভর করে গাড়ি ভাড়া। অফ সিজনে ৪০০০/-টাকায় পেয়ে যাবেন কিন্তু সিজনে এই ভাড়া বাড়তে পারে। সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে গাড়ি ভাড়া করা যাবে। সকালে কলাতলি/সুগন্ধ্যা বা লাবনী বিচে সময় কাটিয়ে ১১টার দিকে বেরিয়ে পড়তে পারেন মেরিন ড্রাইভ দিয়ে যাওয়ার পথে হিমছড়ি দেখে যেতে পারেন। অাসার পথে ইনানীতে সন্ধ্যা কাটিয়ে অাসুন। দুপুরের খাবার ইনানীর কোন রেস্টরেন্টে খেতে পারেন।
হিমছড়ি
হিমছড়ির অবস্থান কলাতলি থেকে মোটামুটি ১০ কিলোমিটার পূর্বে। যেতে হয় মেরিন ড্রাইভ দিয়ে। সবুজ পাহাড় আর ঝর্ণা এখানকার প্রধান আকর্ষণ। কক্সবাজার থেকে হিমছড়ি যাওয়ার পথে আর একটি আকর্ষণ হল, পথের বামে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা সবুজ ঘেরা পাহাড় আর ডানদিকে সমুদ্রের নীল জলরাশি থেকে ধেয়ে আসা অনবরত ঢেউয়ের খেলা। বর্ষা মৌসুমে হিমছড়ির ঝর্ণা অধিক জীবন্ত ও প্রাণবন্ত থাকে। এখানে পাহাড় চূড়ায় একটি রিসোর্টও রয়েছে, যেখান থেকে নীল জলরাশির বিশাল সমুদ্র অন্যরূপে ধরা দেয়।হিমছড়ি যাওয়ার পথে বেশ কয়েকটি ঝর্ণা দেখতে পাওয়া যায় যেগুলো শীতের মৌসূমে প্রায় শুকনো থাকে।হিমছড়ি যাওয়ার এক থেকে দেড় কিলোমিটার অাগে বড়ছড়ি নামে অারেকটি স্পট রয়েছে। পাহাড়, খুব অল্প পানির ঝর্ণা অার গুহার প্রতি ভালোলাগা থাকলে ঘুরে দেখতে পারেন এ স্পটটিও ।
ইনানি সৈকত
এটি কক্সবাজার থেকে প্রায় ২৫ কিমি দূরত্বে অবস্থিত। ইনানী সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের অন্যতম অাকর্ষণ। দ্রুত গড়ে উঠছে বিভিন্ন মানের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট। ধীরে ধীরে এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এখানকার মুল অাকর্ষণ হলো প্রায় সমতল সৈকত এবং পাথর/প্রবাল। তাছাড়া কলাতলির তুলনায় এখানকার পানি অনেক বেশি স্বচ্ছ। যারা কক্সবাজার ভ্রমনে নিরিবিলি থাকতে চান তারা কলাতলীর হোটেলে থাকার পরিবর্তে ইনানি থাকতে পারেন।
ডুলাহাজরা সাফারী পার্ক
চকোরিয়া উপজেলায় অবস্থিত পার্কটি কক্সবাজার থেকে প্রায় ৩৫ কিমি উত্তরে অবস্থিত। অর্থাত্ একটি ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পথে মুল সড়কের পাশেই অবস্থিত। গ্রুপ ট্যুর-এ যারা রিজার্ভ বাসে ট্যুরে যাবেন তারা এই পার্ক হয়েই কক্সবাজার যেতে পারেন। পাহাড়ি এলাকায় গড়ে তোলা এ পার্কের আয়তন কমবেশি ২,২২৪ একর। এখানে বিলুপ্তপ্রায় ও বিরল প্রজাতি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও বংশবৃদ্ধি ঘটানো হচ্ছে। বিনোদনের জন্য ডুলাহাজারা সাফারী পার্ক পর্যটকদের আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। এখানে প্রায় ১০০ ধরণের বন্যপ্রাণী ও অসংখ্য গাছপালার মডেল মুরাল তৈরী করা হয়েছে।
মহেশখালী দ্বীপ
দেশের একমাত্র এই পাহাড়ি দ্বীপ।দূরত্ব প্রায় ১২ কিমি। স্পীডবোটে যেতে সময় লাগে ১৫ মিনিট অার ট্রলারে প্রায় ৪৫ মিনিটি। স্পীডবোটের ভাড়া ৭৫/- থেকে ১০০/- টাকা। যেতে হয় ৬ নম্বর ঘাট দিয়ে। কলাতলি থেকে হেটে, রিক্সায় বা টমটমে করে যেতে পারেন ৬ নম্বর ঘাটে। এখানে পাহাড়ের চূড়ায় অাদিনাথ মন্দির ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বৌদ্ধমন্দির। অার কে না জানে মহেশখালীর পানের খ্যাতির কথা। যা নিয়ে বাংলা সাহিত্যে গানও রয়েছে। এখানে অারো চোখে পড়বে শুটকি শুকানোর দৃশ্য। তবে সবচেয়ে মনোরোম দৃশ্য হলো ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদের বুক চিড়ে সরল রেখায় চলা দীর্ঘ্য জেটিপথ। স্পীডবোটে ভ্রমনটাও দারুন উপভোগ্য।
সোনাদিয়া দ্বীপ
মহেশখালী থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন আর একটি দ্বীপ সোনাদিয়া। অপরূপ সৌন্দর্যের আধার এই দ্বীপের আয়তন লম্বায় ৭ কিমি প্রস্থ ২.৫ কিমি। সোনাদিয়া রয়েছে অনন্য সুন্দর এক নিরিবিলি সমুদ্র সৈকত। সাগর ঘেরা দ্বীপে রয়েছে কেয়া-নিশিন্দার ঝোপ, ছোট বড় খাল বিশিষ্ট প্যারাবন। আরো আছে বিচিত্র প্রজাতির জলচর পাখি। এই দ্বিপের সৈকত জুড়ে রয়েছে অজস্র লাল কাঁকড়া। মহেশখালী হয়ে যাওয়া যায় সোনাদিয়া দ্বীপে। অবশ্য কক্সবাজার থেকে স্পীডবোটে করে সরাসরিও যাওয়া যায়। (সোনাদিয়া দ্বীপ নিয়ে একটি পূর্ণ পোস্ট পরবতীতে দেওয়া হবে।
টেকনাফ
অাপনি যেতে পারেন টেকনাফ। টেকনাফের সমুদ্র সৈকতও বেশ মনোরম। সৈকতে দাড়িয়ে থাকা অসংখ্য রঙ্গিন সাম্পান অার বৈচিত্রহীন নিরিবিলি সৈকত এখানকার মুল অাকর্ষণ। এছাড়া ভালোবাসার স্বাক্ষী হয়ে থাকা মাথিনের কূপ (যার সবিস্তার বর্ণনা পাওয়া যায় ধীরাজ ভট্টাচার্য-এর ‘যখন পুলিশ ছিলাম’ উপন্যাসে)। রয়েছে দেশের প্রথম বার্মিজ মার্কেট। মৌসুমী টাটকা কৃষিফল ও সব্জি (তরমুজ, ফুটি, সশা ইত্যাদি) খাওয়ার সুযোগ পাবেন। সাথে পাবেন টাটকা পান। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ অাসা যাওয়ার পথে দেখতে পাবেন লবন চাষ।
শাহপরির দ্বীপ
নামে দ্বীপ হলেও এটি মুল ভূখন্ডের সাথে যুক্ত একটি অঞ্চল। মাছ ধরা এবং শুটকির জন্য বিখ্যাত এ স্থানটি। টেকনাফ উপজেলা শহর থেকে ২০/২৫ কিমি দক্ষিণে অবস্থিত এ অঞ্চলটি বাংলাদেশের সর্ব পূর্ব-দক্ষিণ অংশ এটি। এখানে অাছে অত্যন্ত সুন্দর বীচ এবং বীচের ঠিক উপরেই দীর্ঘ সামাজিক বন। এখানে লাল কাকড়ার দেখা মিলে। অনেক দুর থেকে এ কাকড়া মানুষের উপস্থিতি বুঝতে পারে এবং দৌড়াতে থাকে নিরাপদ অাশ্রয়ের খেঁাজে। অাছে দীর্ঘ জেটি।
রাডার ষ্টেশন ও লাইট হাউস
হিলটপ সার্কিট হাউসের দক্ষিণ পাশের চূঁড়ায় কক্সবাজার রাডার ষ্টেশনের অবস্থান। এখান থেকেই দেশব্যাপী ঝড়ঝাঞ্জা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাসের পূর্বাভাস দেয়া হয়। রাডার যন্ত্রটি সুইডিশ শিশুকল্যাণ সংস্থা ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সহযোগিতায় ১৯৬৮ সালে স্থাপন করা হয়। রাডার ষ্টেশনের দক্ষিণে অপর একটি পাহাড়ের চূঁড়ায় এর অবস্থান।
বদর মোকাম
বদর মোকাম মসজিদটি শহরের সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ। স্থানীয়ভাবে জনশ্রুতি আছে পীর বদরশাহ’র নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে। বাঁকখালী নদীর দক্ষিণ তীরে কক্সবাজার সদর থানার পার্শ্বে মসজিদটি অবস্থিত।
হিলটপ সার্কিট হাউস
জেলা পরিষদ ভবনের পশ্চিম দক্ষিণে পাহাড়ের চুঁড়ায় মনোরম পরিবেশে হিলটপ সার্কিট হাউসের অবস্থান। অল্পক্ষণের জন্য হলেও ভারতের দার্জিলিং এর মত মনে হবে। এর চূঁড়া থেকে বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গ ও পর্যটন নগরীর টপভিউ অবলোকন করা সম্ভব।
লবণ উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা
ইসলামপুর, নাপিতখালী এলাকা থেকে বাংলাদেশের চাহিদার ৮৫% লবণ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপনন হয়ে থাকে। কক্সবাজার শহর থেকে ৩৫ কি:মি: দূরে এর অবস্থান। টেক্সী কিংবা মাইক্রোবাস যোগে বেড়ায়ে আসা যাবে।
গোলাপ চাষ প্রকল্প
প্রায় ৫০ একর জায়গা জুড়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গোলাপ ফুলের চাষ করা হয়েছে। উক্ত ফুলের বাগানটি চকরিয়াউপজেলার হারবাং এলাকায় অবস্থিত।
যাতায়াত
ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য এসি/নন-এসি বাস স্লীপার কোচ ছাড়াও রয়েছে বিমানের সুবিধা। এছাড়াও ট্রেনে করে চট্টগ্রাম গিয়ে সেখান থেকে বাসে করে কক্সবাজার যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে কক্সবাজার বাসে যেতে সময় লাগে প্রায় অাট থেকে ১০ ঘণ্টা, বিমানে ৪৫/৫০ মিনিট। বাস ভেদে এসি/ননএসি ভাড়া ৮০০-১৫০০ টাকা। প্রতিদিনই অসংখ্য বাস ঢাকা কক্সবাজার অাসা যাওয়া করে। বাসগুলো মূলত রাতের বেলায় বেশি চলাচল করলেও দিনেও কিছু ট্রিপ রয়েছে। ঢাকার গাবতলী/টেকনিক্যাল/কল্যাণপুর/ কলাবাগান/অারামবাগ/সায়দাবাদ/যাত্রাবাড়ী থেকে বেশিরভাগ বাস ছেড়ে যায়। বাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, গ্রীন লাইন পরিবহন (০১৭৩০০৬০০০৪, ০১৭৩০০৬০০৭১), হানিফ (০১৭১৩৪০২৬৭১, ০১৭১৩৪০২৬৭০), সেন্টমার্টিন পরিবহন (০১৭১১৩২১১৪৩, ০১৭১১৬৬৬১০৯), শ্যামলী (০২-৯০০৩৩১, ০২-৮০৩৪২৭৫, ০১৭১৬-৯৪২১৫৪), সাউদিয়া পরিবহন (০১৯১৯৬৫৪৯৩৫, ০১৯১৯৬৫৪৮৫৮), এস আলম (০১৮১৩-৩২৯৩৯৪, ০২-৯৩৩১৮৬৮), ইত্যাদি। কমলাপুর থেকে চিটাগাং মেইল, তুর্ণানিশিথা, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, মহানগর গোধূলীসহ একাধিক ট্রেন চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
বিমান সংস্থাগুলোর যোগাযোগ হলো বাংলাদেশ বিমান (০২-৮৯০১৬০০, ০২-৮৯০১৭৩০-৪৪), রিজেন্ট এয়ার ওয়েজ (০২-৮৯৫৩০০৩), ইউএস বাংলা (০১৭৭৭৭৭৭৭৮৮, ০১৭৭৭৭৭৭৮৯৯, ০১৭৭৭৭৭৭৯০০), নভোএয়ার (১৩৬০৩, ০২-৯৮৭১৮৯১-২, ০১৭৫৫৬৫৬৬৬০-১), । ক্লাস ভেদে ঢাক-কক্সবাজার-ঢাক রিটার্ন টিকিট দশ থেকে সাড়ে এগার হাজার টাকা তবে ইদানীং বিভিন্ন বিমান সংস্থার প্রায় সারা বছরই ডিসকাউন্ট অফার থেকে থাকে। সেক্ষেত্রে ভাড়া অনেক কম হয়ে থাকে।
থাকার ব্যবস্থা:
কলাতলি এলাকা
সীগাল হোটেল লিমিটেড (০১৭৬৬৬৬৬৫৩০, ০৩৪১-৬২৪৮০-৯০), হোটেল দ্য কক্স টুডে (০১৭৫৫৫৯৮৪৫০, ০৩৪১-৫২৪১০-২২), হোটেল সী ওয়ার্ল্ড (০৩৪১-৫২২২৬, ০৩৪১-৫১৬২৫), ওশান প্যারাডাইস হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট (০১৯৩৮৮৪৬৭৬৩-৭, ০৩৪১-৫২৩৭০-৯), লং বিচ হোটেল (০১৭৫৫৬৬০০৫১, ০৩৪১-৫১৮৪৩-৬), হোটেল সী ক্রাউন (০১৮১৭০৮৯৪২০, ০৩৪১-৬৪৭৯৫), এ্যালবাট্রস রিসোর্ট (০১৮১৮৫৪০১৭৭, ০১৮১৬০৩৩৪৪৫, ০১৮১৮৫৯৬১৭৩, ০৩৪১-৬৪৬৮৪), হোটেল মিডিয়া ইন্টারন্যাশনাল (০১৭১১৩৪১১৬৪)। পর্যটনের রয়েছে হোটেল শৈবাল (০৩৪১-৬৩২৭৪), মোটেল প্রবাল (০৩৪১-৬৩২১১), হোটেল লাবনী (০১৯১৩৯৩২০৮২)।
ইনানি এলাকায় থাকার হোটেল
রয়াল টিউলিপ সী পার্ল বিচ রিসোর্ট (৮০০৩৫৮০৮৪৬, ০৩৪১-৫২৬৬৬-৮০), লা বেলা রিসোর্ট (০১৮২৫৯২৩৯৮৯), ইনানি রয়্যাল রিসোর্ট (০১৭৭৭৭৯০১৭০)। মারমেইড ইকো রিসোর্ট (প্যাচার দ্বীপ, ০১৮৪১৪৬৪৬৪-৯,) সাম্পান ইকো রিসোর্ট (০১৯৭৪৭২৬৭২৬)।
খাওয়া-দাওয়া
প্রায় প্রতিটি হোটেলেই নিজস্ব রেস্টুরেন্ট থাকে, তবে যেখানে খাবারের দাম তুলনামূলক বেশি। কলাতলী রোডে অনেক রেস্টুরেন্ট রয়েছে অাপনি চাইলে এসব রেস্টুরেন্টে খেয়ে দেখতে পারেন। উল্লেখ্য কয়েকটি হলো- ঝাউবন, পৌষী, পানকৌড়ী, নিরিবিলি অর্কিড ক্লাব অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, মারমেইড ক্যাফে ইত্যাদি। খাবার অর্ডার দেওয়ার আগে দাম জেনে নেওয়া ভালো কারণ এখানকার হোটেলগুলো কিছুটা ব্যয়বহুল।
বাজেট
কক্সবাজার ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাজেট সম্পূর্ণভাবে অাপনার নিজের পছন্দের ওপর নির্ভর করবে। খুব অল্প বাজেটে যেমন কক্সবাজার ভ্রমন করা যায় তেমনি টাকা খরচ করতে চাইলে সে ব্যবস্থাও রয়েছে। অাপনার সামর্থ ও রুচির ওপর নির্ভর করে ঠিক করে নিন অাপনার কক্সবাজার ভ্রমন। তবে যাদের বাজেট সমীবদ্ধতা রয়েছে তাদের জন্য কিছু পরামর্শ হলো-
১. ট্রেনে করে চট্রগ্রাম চলে যান সেখান থেকে বাসে করে কক্সবাজার অাপনার ভ্রমন খরচ খানিকটা কমে যাবে। তবে এক্ষেত্রে সময় অপচয় হবে এবং একটু কষ্ট হবে। সরাসরি যেতে চাইলে নন-এসি বাসে রাতে ভ্রমণ করুন। বাসা থেকে খেয়ে একটু পরের দিকের বাস (রাত ১০:৩০-১১টার)-এ ভ্রমণ করুন। এতে রাতের খাবার এবং এক রাতের হোটেল ভাড়া বেঁচে যাবে। বলাবাহুল্য, হাইওয়ে রেস্টুরেন্টগুলো বেশ ব্যয়বহুল হয়ে থাকে। ইউনিক পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, হানিফ পরিবহন দেখতে পারেন, এদের সিট এবং ড্রাইভাররা ভালো।
২. সাধারণ ট্রাভেল ব্যাগের পরিবর্তে ব্যাকপ্যাক বহন করুন। ট্রলি বহন আপনার চলাচলের সীমাবদ্ধতা তৈরী করবে। ফলে হাটার দূরত্বেও অাপনাকে বাহন ব্যবহার করতে হবে যা অপ্রয়োজনীয় খরচ বাড়াবে।
৩. বীচ থেকে কিছুটা দূরে হোটেল ঠিক করবেন। প্রথমে একজন যেয়ে দরাদরি করে রুম ভাড়া ঠিক করুন, বাকীদের পরে ডাকুন; অনেক কমে ভাড়া করতে পারবেন। রিক্সাওয়ালা, অটো/সিএনজি চালকদের পরামর্শে হোটেল নিবেন না, কারণ তারা হোটেল থেকে কমিশন পেয়ে আপনাদের বিভ্রান্ত করবে।
৪. বীচ থেকে হেঁটে হেঁটেই আসা যাওয়া করুন। রিকশা বা অটো নিতে হলে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতে অবশ্যই দরদাম করে উঠুন।
৫. কয়েকজন থাকলে খাবারের মূল আইটেমগুলো ভাগ করে খান। এত খাবার খরচ অনেক কমে যাবে। হোটেলের নিজস্ব রেস্টুরেন্টের পরিবর্তে স্বতন্ত্র রেস্টুরেন্টে খান খরচ কম হবে। অহেতুক ঝামেলা এড়াতে খাওয়ার পূর্বে দরদাম জেনে খান। রূপচান্দা, চিংড়ি-এর মত দামী খাবার পরিহার করুন। সকালের নাস্তা হিসেবে কলা ও পাউরুটি খেতে পারেন। স্বাস্থ্যসম্মত এ খাবার খরচ কমিয়ে দেবে প্রায় অর্ধেক অথচ পুষ্টিমান নিশ্চিত করবে।
৭. ইনানি ও হিমছড়ি যেতে হলে কলাতলি মোড় থেকে লোকাল অটোতে উঠে যান। ২০ টাকা করে হিমছড়ি এবং ৫০-৬০ টাকায় ইনানি যেতে পারবেন । তবে ভ্রমনসঙ্গী বেশি হলে দরদাম করে হিমছড়ি ও ইনানির জন্য অটো ঠিক করে নেন। একই পথে এ দুটি স্পট হওয়ায় কম খরচে যেতে পারবেন।
৮. ফিরুন রাতের বাসে। দুপুরের আগে চেক আউট টাইম অনুসারে হোটেল ছেড়ে দিন। হোটেল কর্তৃপক্ষকে বলে আপনার ব্যাগ হোটেলে চেক আউট লাগেজ হিসেবে রাখার ব্যবস্থা করে আপনি ঘুরে বেড়ান।
৯. কর্মদিবস (রবি থেকে বৃহস্পতি) এড়িয়ে ভ্রমনে যান, এ সময় ভিড় কম থাকে বলে অল্প খরচে হোটেল ও লোকাল পরিবহন (অটো/বাস) ব্যবহার করতে পারবেন। দু্ই ঈদের আগে পরে, টানা ছুটির সময়, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ এড়িয়ে যান। অফ সিজনে গেলে ভালো হোটেলে অল্প টাকায় থাকতে পারবেন। কোন কোন হোটেল এসময় ৭৫ থেকে ৮০% পর্যন্ত ছাড় দিয়ে থাকে।
বাজেট কম বলে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই । স্বল্প বাজেটে ঘুরতে পারাটাই কৃতিত্বের বিষয়। বেশি টাকা খরচ করে তো যে কেউ ঘুরতে পারে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য:
প্রথমত কক্সবাজার যাওয়ার আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে যাওয়া উচিত্। অন্যথায় ভ্রমনে বিঘ্ন ঘটতে পারে। দ্বিতীয়ত, নিরাপত্তা চৌকির সংকেত অনুসরণ করে সমুদে্র গোসলে নামুন। সাঁতার না জেনে থাকলে গভীরে যাবেন না। এতে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

Comments

Popular posts from this blog

বান্দরবান ভ্রমন গাইড

সাগরকন্যা কুয়াকাটা ভ্রমন

সেন্টমার্টিন ভ্রমনের আদ্যপান্ত